News
Local

বর্ষায় ব্যাপক বন্যা থেকে স্থানীয়দের রক্ষার জন্য ৯ কিলোমিটার খাল খনন

বর্ষায় ব্যাপক বন্যা থেকে স্থানীয়দের রক্ষার জন্য ৯ কিলোমিটার খাল খনন

কক্সবাজার - রোহিঙ্গ্যা শরণার্থী ও স্থানীয়দের আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা থেকে রক্ষা করতে কক্সবাজারে বিভিন্ন উদ্যোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম বর্ষায় ব্যাপক বন্যা থেকে স্থানীয় অধিবাসীদের রক্ষা করতে একটি বড় খাল খননের কাজ বাস্তবায়ন করছে।

 

কক্সবাজার জেলা বাংলাদেশের অন্যতম ভারি বৃষ্টিপাত প্রবণ এলাকা। এ অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের সময় পানির অতিরিক্ত প্রবাহ প্রতিরোধ এবং পানি বের হয়ে যাওয়ার পথ সুগম করতে জেলার উখিয়া উপজেলায় একটি পরিত্যাক্ত খালের ৯ কিলোমিটারেরও বেশি খনন করা হচ্ছে এখন। 

 

এই খাল খনন কাজে আইওএম উখিয়া উপজেলার হাকিমপাড়া গ্রামের ৫০জন স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগ করেছে। কক্সবাজারে বসবাসকারী রোহিঙ্গ্যা ও স্থানীয়দের মানবিক সহায়তা প্রদানে নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের গৃহীত আসন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতি কর্মকান্ডের একটি পদক্ষেপ হিসেবে আইওএম খাল খননের এই কাজে সহায়তা প্রদান করছে।

 

খাল খননের এই প্রকল্পটি বর্ষাকালে বন্যা প্রতিরোধ করে শুধুমাত্র হাকিমপাড়া ও প্রতিবেশী জামতলি গ্রামের জীবন ও জীবিকাই রক্ষা করবে না, স্থানীয় কৃষির উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

এলাকার নেতৃস্থানীয়দের মতে, পরিত্যাক্ত এই খালের কারণে বন্যায় বিগত কয়েক বছর ৭০ একরের মতো ধান ক্ষেতের ফসল ক্ষতিগ্রস্থ বা ধ্বংস হয়েছে। তারা আরো বলেন, খালটি খননে পর এর পানি আশেপাশের এলাকার চাষাবাদে সেচের কাজে লাগবে।

 

পিআরএম, কানাডিয়ান সরকার ও ইকো এর অর্থায়নে বাস্তবায়িত খাল খননের এই প্রকল্পটি 'কাজের বিনিময়ে অর্থ' এই প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হচ্ছে। ২০,০০০ আমেরিকান ডলারের এই উদ্যোগ আইওএম, ডাব্লিউএফপি ও ইউএনএইচসিআর এর ইন্টারগেঞ্জি প্রকল্প সাইট মেইনটেন্যানেশন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্প (এসএমইপি) এর একটি অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

 

এসএমইপি উদ্যোগের লক্ষ্য হল কক্সবাজারে বর্ষা মৌসুমের বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকি মোকাবেলা করা। এর আওতায় জেলার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভন্ন ভারি যন্ত্রপাতি আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছে। ভারি বর্ষণের কারণে ভূমিধ্বস ও বন্যায় ক্যাম্পে প্রবেশের মূল সড়ক পথগুলো বন্ধ হয়ে গেলে এইসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত সড়ক ও নৌপথের বাধাগুলো অপসারণ করা যাবে। এসএমইপি প্রকৌশলী, স্থানীয় শ্রমিক ও রোহিঙ্গ্যারা নিজেও শরণার্থীদের ক্যাম্পের সবচেয়ে বিপদজনক এলাকা থেকে ক্যাম্পের ভেতরেই তুলনামূলক নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেয়ার জন্য জমি তৈরির কাজ করছে।

 

আইওএম এর ক্যাম্প কোঅর্ডিনেশন এন্ড ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট (সিসিসিএম) অপারেশন অফিসার ডামন এলসওর্থ বলেন, "বছরের পর বছর খনন না করে এই খালের মধ্যে কোনো পানি ছিল না। এর ফলে বর্ষায় খালের আশেপাশের এলাকা বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছিল। কারণ, এই খাল ছাড়া পার্শ্ববর্তী পাহাড়গুলো থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি বের হওয়ার কোনো পথ নেই।"

 

হাজার হাজার রোহিঙ্গা মায়ানমারে চরম সহিংসতা থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আসার আগে থেকেই পাহাড়ি এই জেলা ভূমিধ্বস প্রবণ। দুর্দশাগ্রস্থ উদ্বাস্তু এইসব মানুষ তাদের পরিবারের জন্য কোথাও না কোথায় সামান্য একটু মাথা গোঁজার জায়গার ব্যবস্থা করতে গিয়ে আশেপাশের পাহাড় থেকে গাছপালা কেটে পরিষ্কার করে ফেলে।

 

২০১৭ সালের আগস্টের শেষ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০০,০০০ রোহিঙ্গ্যা উদ্বাস্তু এসে পৌঁছেছে কক্সবাজারে। এই লোকসংখ্যা স্থানীয় অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বেশিরভাগ মানুষই এখন গাছপালা কেটে পরিষ্কার করা এই পাহাড়গুলোর ধাপে ধাপে বসবাস করছে। বালুমাটির এই পাহাড়গুলোর এখন অত্যন্ত ঘন বসতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাহাড়গুলো এখন আরো বেশি ভূমিধ্বস প্রবণ হয়ে পড়েছে এবং বর্ষায় ভেঙে পড়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

 

খাল কোনো প্রকল্পে কর্মরত স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন নিজ এলাকা রক্ষার কাজে অংশগ্রহণ করতে পেরে তারা ভালো বোধ করছেন।

 

খনন কাজের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত সৈয়দ কাশেম, ৬৫, প্রকল্পে স্থানীয়দের অংশগ্রহণের প্রশংসা করে বলেন, "ভালো লেগেছে যে খাল খননের এই কাজে আমাদের স্থানীয়দের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মনে হয়েছে যে আমরা আমাদের সম্পদের জন্যই কাজ করছি।"

 

তিনি আরো বলেন, "আমরা ইতিমধ্যেই নয় কিলোমিটারেরও  বেশী খনন করেছি। এর ফলে বৃষ্টির পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারবে এবং খালের পানি উপচে বন্যা হবে না।"

 

কক্সবাজারে ইতিমধ্যেই মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি হয়ে গেছে। সম্ভাব্য ব্যাপক জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করতে আইওএম ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে রাস্তাঘাট, পায়েচলা পথ, সেতু ও নালা তৈরী এবং মাটি শক্ত করা করা হয়েছে যাতে বৃষ্টির সময় যোগাযোগ সহজ ও অব্যাহত থাকে।

 

বিশেষ করে স্থানীয় এলাকাবাসীর জন্য টেকনাফে - যেখানে রোহিঙ্গ্যারা স্থানীয়দের সাথেই বসবাস করছে - পাড়া ডেভেলপমেন্ট কমিটি (পিডিসি) প্রতিষ্ঠা করেছে আইওএম। ছয়জন রোহিঙ্গ্যা ও পাঁচজন স্থানীয় অধিবাসীর সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে এই পিডিসিগুলো। পিডিসির সাথে কাজ করে টেকনাফে এ পর্যন্ত ২৪টি কুইক ইম্প্যাক্ট প্রকল্পে সহায়তা করেছে আইওএম। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে এলাকায় রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণ এবং পাহাড়ে সিঁড়ি, নালা ও পাহাড়ের ধাপ রক্ষার কাজ পাহাড়ের। এইসব কাজ টেকনাফে বসবাসকারী স্থানীয় ও রোহিঙ্গ্যা সবাইকেই ভালোভাবে বর্ষা মোকাবেলায় সহায়তা করবে।

 

আইওএম দাতা সংস্থা কেএসরিলিফ এর অর্থায়নে টেকনাফে সম্প্রতি তৈরী তার হ্নিলা লগ বেসে ত্রিপল, বাঁশ, খাবার, পানি ও চিকিৎসার জিনিসসহ জরুরি বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী মজুদ করে রাখছে। ফলে বর্ষায় টেকনাফে যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুব শোচনীয় হয়ে পড়লেও রোহিঙ্গ্যা ও স্থানীয় অধিবাসী উভয়েরই অতি জরুরি প্রয়োজনগুলো মেটানোর মতো জিনিসপত্র হাতের নাগালেই থাকবে।

 

কক্সবাজারের দক্ষিণের স্থানীয় অধিবাসীরা যাতে ঘূর্ণিঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতসহ যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে সেজন্য তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা, অনুসন্ধান ও উদ্ধার এবং অগ্নি নিরাপত্তার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদানের কাজে পাশাপাশি কাজ করার জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী দল তৈরি করা এবং তাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি বিতরণ করা হয়েছে।

 

আরও তথ্যের জন্য আইওএম কক্সবাজারে ফিয়োনা ম্যাকগ্রেগরের সাথে গাযোগ করুন। টেল: +৮৮ ০ ১৭৩৩ ৩৩৫২২১, ইমেইল: fmacgregor@iom.int